কবুতর কেন ডিম পারে না? ডিম না পারলে করনীয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি

কবুতর কেন ডিম দেয় না বা ডিম পারে না/করনীয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি- কবুতর বিভিন্ন কারণে ডিম দেয় না বা ডিম পারে না। এখানে আমি কত গুলো কারণ বলব যার কারণে কবুতর ডিম পারে না বা ডিম দেয় না এবং কবুতর এর এই সমস্যা হয়ে গেলে করণীয় কি সেসব নিয়েও আলোচনা করা হবে। আপনার কবুতর এর ডিম না দেয়ার সমস্যাটি কি কারণে হয়েছে সেটা খুঁজে বের করে আপনাকে তার সমাধান করতে হবে।


কবুতর কেন ডিম পারে না? ডিম না পারলে করনীয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি



কবুতর ডিম না পারার কারন এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হলঃ

এখানে কবুতর এর ডিম না পারার তের টি কারন উল্লেখ করা হল। এর বাহিরে ও কবুতর বিভিন্ন কারন এ ডিম নাও পারতে পারে। যেমন-

  • এক। কবুতর এর ডিম না দেয়ার বা না পারার একটি অন্যতম কারণ হলো, বাজা কবুতর। অর্থাৎ আপনার কবুতর টি যদি বাজা বা বাঞ্জা হয় বা কবুতর এর যদি কোন শারীরিক অক্ষমতা থাকে তাহলে কবুতর এর পেটে ডিম আসে না। তবে মাদি কবুতর একা একা ও ডিম দিতে পারে কিন্তু ওই ডিমগুলো কখনোই ফোটে না বা অই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় না। এক্ষেত্রে আপনার করনীয় হল বাজা কবুতরটিকে পর্বতন করে দেয়া। যদি নর কবুতরটি বাজা হয় তা হলে সেটা পরির্বতন করে একটি ভাল নর নিয়ে আসবেন আবার যদি মাদি বাজা হয় তা হলে সেটি পরির্বতন করে ভাল একটি মাদি নিয়ে আসবেন।

  • দুই। সুষম খাবারের অভাবে কবুতর অনেক সময় ডিম দেয় না। অনেক বার ডিম বাচ্চা দেয়ার ফলে কবুতর এর শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হতে পারে। যার কারণে কবুতর ডিম দেয় না বা ডিম পাড়া বন্ধ করে দিতে পারে। তাই কবুতর এর শরীরে জাতে সব ধরনের পুষ্টি চাহিদা পুরন হয় সেই দিকে খেয়াল রেখে কবুতর এর জন্য খাবার নির্বাচন করতে হবে। খাবার এর পাশাপাশি কবুতর কে ভালো মানের গ্রিট খেতে দিতে হবে এবং নিয়ম মত মাসিক কোর্স, ক্রিমির কোর্স করাতে হবে। এতে আপনার কবুতর ভালো ডিম বাচ্চা করবে।

  • তিন। অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক প্রয়োগের ফলে কবুতর এর ডিম পাড়ার সক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কবুতর এর এই পরিচর্যা করতে হবে ছোটবেলা থেকেই। বিভিন্ন কারণে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের ফলে কবুতর এর ডিম পাড়ার সক্ষমতা অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায় যার কারণে কবুতর ডিম দেয় না। অনেক কবুতর কে ছোটবেলা তে নানা রোগ এর জন্য বিভিন্ন রকম ওষুধ দেয়া হয়ে থাকে। এই কবুতর গুলো যখন বড় হয়ে ডিম বাচ্চা করার সময় হয় তখন নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই পরির্চযা করতে হবে ছোট বেলা থেকে।



  • চার। দীর্ঘদিন যদি কোন কবুতর ডিম বাচ্চা করে যায় এবং কবুতর কে যদি রেস্ট না দেয়া হয় সে ক্ষেত্রে কবুতর ডিম পাড়া বন্ধ করে দিতে পারে এবং অতিরিক্ত খাবার প্রয়োগের ফলে কবুতর এর গায়ে যদি চর্বি জমে যায় সে ক্ষেত্রে কবুতর ডিম নাও দিতে পারে। কবুতর অন্তত দুইবার ডিম বাচ্চা করার পরে পনের থেকে বিশ দিনের জন্য রেস্ট দিতে হবে। খুব ভাল হয় যদি প্রত্যেক বার ডিম বাচ্চা করার পরে রেস্ট দিতে পারলে। আবার কবুতরকে খুব বেশি তেল জাতীয় খাবার দেয়ার ফলে কবুতর এর গায়ে চর্বি জমে যায়। তখন কবুতর ডিম পারা বন্ধ করে দিতে পারে। যদি এমন হয় তখন কবুতর এর খাবার এ তেল জাতীয় খাবার এর পরিমান কমিয়ে দিতে হবে ( আপনি চাইলে বাত দিতে পারেন )। পাশাপাশি কবুতর কে পরিশ্রান্ত করতে হবে। কবুতর কে উরার সুযোগ করে দিতে হবে।

  • পাঁচ। অনেক সময় কবুতর নিজে থেকে রেস্টে যায়। এক্ষেত্রে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। কিছুদিন পরে এটি নিজ থেকেই ঠিক হয়ে যাবে।

  • ছয়। দীর্ঘদিন যদি কবুতর কে কৃমির কোর্স না করানো হয় তাহলে কবুতর ডিম পাড়া বন্ধ করে দিতে পারে। কবুতর এর সুস্থতার জন্য অবশ্যই দুই থেকে তিন মাস পর পর আপনাকে কৃমির কোর্স করাতে হবে। ক্রিমির কোর্স শুধু কবুতর এর ডিম বাচ্চা করার ক্ষেত্রেই নয় কবুতর এর সবুজ এবং পাতলা পায়খানা, কবুতর এর ঝিমানো রোগ সহ আরো নানা রকম সমস্যার হাত থেকে কবুতর কে রক্ষা করে। কবুতরের কৃমির কোর্স করানোর নিয়ম।



  • সাত। আপনি যদি কবুতর খাচায় পালন করেন এবং কবুতর এর খাচাটি যদি ছোট হয়, কবুতর যদি ঠিক ভাবে খাচার মধ্যে নড়াচড়া না করতে পারে তাহলে কবুতর এর ব্রীডিং ঠিকমতো হয়না সে ক্ষেত্রে কবুতর ডিম নাও দিতে পারে। আপনাকে অবশ্যই কবুতর এর থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান জায়গা নিশ্চিত করতে হবে।

  • আট। খাঁচায় কবুতর পালন করলে কবুতর এর খাচার নিচে অবশ্যই এক টুকরা ( দের ইঞ্চি পরিমান উঁচু এবং দুই বিঘা পরিমান লম্বা ) কাঠ দিতে হবে। যাতে কবুতর টি সেই জায়গায় দাঁড়াতে পারে এবং মিটিং বা মিলন করতে পারে।

  • নয়। কোন কবুতর যদি দীর্ঘদিন যাবত রোগে ভোগে তাহলে কবুতর ডিম পাড়া বন্ধ করে দিতে পারে। দীর্ঘদিন রোগে ভোগা কবুতর দিয়ে ডিম বাচ্চা করানো একদম উচিত নয়। এমন কবুতর ডিম পারলেও অনেক সময় ডিম জমে না বা ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা যায়। আপনাকে অবশ্যই ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম এর কোর্স করিয়ে কবুতর টি সম্পুর্ন করে নিয়ে এমন কবুতর কে বাচ্চা করার জন্য জোড়া দিতে হবে।

  • দশ। হঠাৎ করেই যদি আপনার কবুতর টি কোন কারনে ভয় পায় বা আপনি যে জায়গায় কবুতর পালন করছেন সেখানে যদি কবুতর নিজেকে সুরক্ষিত না মনে করে তাহলে কবুতর ডিম পাড়া বন্ধ করে দিতে পারে। এজন্য আপনার খামার থেকে বিড়াল ইঁদুর এবং অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা কম করতে হবে। আবার কবুতর এর বাসস্থান এর পরির্বতন হলেও কবুতর অনেক সময় ডিম পারা বন্ধ করে দিতে পারে।

  • এগার। কবুতর কে নিয়মিত গোসল দিতে হবে এবং মলদ্বারের চারপাশে ছোট ছোট লোম গুলো কেটে দিতে হবে। এই বিষয়টি নিয়ে যারা ঠিকমতো না জানেন না তারা করতে যাবেন না। ফেন্সি কবুতর এর ক্ষেত্রে মলদ্বারের লোম কাটা বিষয়টি ডিম জমার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • তের। কবুতর এর বয়স যদি অনেক বেশি হয়ে যায় অর্থাৎ বুড়ো কবুতর ডিম পাড়া বন্ধ করে দিতে পারে। এটি নির্ভর করে আপনার কবুতর এর শারীরিক সক্ষমতার উপর। আবার অনেকে বলে থাকে কবুতর এর পেটে নাকি ডিম এর থলে থাকে। এই থলে শেষ হয়ে গেলে কবুতর ডিম পারা বন্ধ করে দিতে থাকে। তবে এই বিষয় এর তেমন কোন প্রমান পাওয়া যায় না। তবে এটা সত্য কবুতর এর বয়স হলে কবুতর ডিম পারা বন্ধ করে দেয়। এখানে বলে রাখি নতুন কবুতর এর ক্ষেত্রে কিছু কবুতর তিন মাসে কিছু কবুতর পাঁচ মাসে এমনকি এক বছর পর্যন্ত ডিম পাড়ার জন্য সময় নিতে পারে। এটি নির্ভর করে কবুতর এর ফিটনেস এর উপর এবং কবুতর এর জাত ভেদে। এই ধরনের কবুতর টি কিন্তু বাজা কবুতর নয়। একবার কবুতর টি রানিং হয়ে গেলে এরপর থেকে নিয়মিত ডিম বাচ্চা করবে।

ডিম না পারলে করনীয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে উপরে আলোচনা করা হল।

উপরে উল্লেখিত কারণ গুলোই মূলত কবুতর এর ডিম না পারার বা ডিম না দেয়ার কারণ। এর বাইরে ও হয়তো কবুতর এর ডিম না পারার কারণ থাকতে পারে। আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে আপনার কবুতরটি আসলে কি কারণে ডিম দেয় না। সমস্যাটি খুঁজে বের করে তা সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিজ কবুতরের খেয়াল রাখবেন। ধন্যবাদ।