কবুতরের জন্য গ্রিটের প্রয়োজনীতা এবং গ্রিট তৈরীর / বানানো পদ্ধতি

কবুতরের জন্য গ্রিটের প্রয়োজনীতা এবং গ্রিট তৈরীর / বানানো পদ্ধতি।



কবুতরের জন্য গ্রিটের প্রয়োজনীতা এবং গ্রিট তৈরীর পদ্ধতি
 গ্রিট তৈরীর উপাদান


গ্রিট কবুতর এর ভাল স্বাস্থ্য এবং ডিম বাচ্চা করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কবুতর এর গ্রিট কি? গ্রিট আপনার কবুতরের জন্য গ্রিটের প্রয়োজনীতা এবং কেন আপনি কবুতরকে গ্রিট দিবেন সেসব বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি ঘরে বসে গ্রিট তৈরীর পদ্ধতি ও এখানে আলোচনা করা হবে।

গ্রিট কি? অথবা গ্রিট কাকে বলে ?


ইটের গুঁড়ো, কাঠ কয়লা, সমুদ্রের ফেনা, পোড়ামাটি, ডিমের খোসা, মোটা বালি, টুকরো করা ছোট পাথর ইত্যাদি উপাদান মিশিয়ে কবুতর এর জন্য এক প্রকার মিশ্রণ তৈরি করা হয়। একেই গ্রিট বলে।

এবার আলোচনা করা যাক আপনি কেন আপনার কবুতরকে গ্রিট দিবেন এই বিষয়ে-


কবুতর এর খাদ্য হজম করতে গ্রিট খুব ই দরকার এবং কবুতর যেহেতু গিলে খাবার খায় সেই খাবার ভাঙার জন্য গ্রিট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দানাদার খাবারের খোসা কবুতর এর খাবার হজমে বাধা দেয়। গ্রিট সেই বাধা দূর করে খাবার হজমে সাহায্য করে।

কবুতর এর শরীরে গ্রিট এর অভাব হলে যেসব সমস্যা হতে পারে সেগুলো হলো-


এক- অনেকেই মনে করে গ্রিট কবুতর এর ডিম উৎপাদনের ভূমিকা রাখে এবং ডিম বাচ্চা করতে সাহায্য করে থাকে। এই ধারণাটি সঠিক নয়। তবে গ্রিট কবুতর এর বহুমুখী উপকার সাধন করে থাকে। গ্রিট কবুতর এর বাচ্চার বেড়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

দুই- গ্রিট এর অভাবের কারণে অনেক সময় বাচ্চার পা বাঁকা হয় এবং মাথায় বা গায়ের লোম কম হতে পারে। যেহেতু খাবার হজম হয় না তাই কবুতর ঠিক মত পুষ্টি পায় না। যার কারন এ কবুতর এর বাচ্চা ঠিক মত বেড়ে উঠতে পারে না এবং গায়ের লোম ঠিক মত গজায় না। বিশেষ করে ঘারে এবং মাথার লোম ঠিক মত হয় না। তাই এই সমস্যা সমাধান এ কবুতর কে নিয়মিত গ্রিট খেতে দিবেন।

তিন- বাচ্চা ঠিকভাবে অনেক সময়ে বেড়ে ওঠে না। অনেক সময় বাচ্চা কবুতর বয়সের তুলনায় আকারে অনেক ছোট থাকে। পরর্তিতে বড় হয়েও এসব কবুতর আকারে ছোট থাকে। এর কারন হল বাচ্চা অবস্থাতে কবুতর ঠিক মত পুষ্টি না পাওয়া।

চার- বড় কবুতর এর ক্ষেত্রে গ্রিট এর অভাব হলে হজম ঠিক মতো হয়না এবং কবুতর টি রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেক সময় কবুতর খাবার খাওয়া কমিয়ে দেয়। তবে বড় কবুতর বিভিন্ন কারন এ খাবার খাওয়া কমিয়ে দিতে পারে। যেমনঃ ক্রিমিতে আকান্ত কবুতর, অসুস্থ কবুতর, বদহজম হলেও কবুতর খাবার খাওয়া কমিয়ে দেয়।

পাচ- গ্রিটের অভাবে অনেক সময় পায়খানার সাথে গোটা দানা বেরিয়ে আসে এবং অতিরিক্ত পাতলা পায়খানা হতে পারে। খাবার ঠিক মত হজম না হতে পারার কারন এ এমন টি হয়ে থাকে।

এবার গ্রিট তৈরীর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা যাক -


এখানে ২০কেজি গ্রিট তৈরীর উপকরণ পরিমাপ আলোচনা করা হলো। আপনারা আপনাদের নিজেদের পরিমাণ মতো এই অনুপাতে গ্রিট তৈরি করবেন। এখানে একটি কথা বলে রাখি গ্রিট তৈরি করার এই উপকরণ গুলো কম বেশি হলে তাতে কোন সমস্যা নেই।

এক- ইটের গুড়া ১৫ কেজি।

দুই- সামুদ্রিক ঝিনুকের গুড়া ৩ কেজি। সামুদ্রিক ঝিনুক না পাওয়া গেলে ঝিনুক সেলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে।

তিন- ডিমের খোসা ১০ থেকে ১৫ টি।

চার- পোড়ামাটি ২ কেজি।

পাঁচ- আয়োডিন লবন ৫০০ গ্রাম।

ছয়- সোডালাইম ৫০০ গ্রাম।

সাত- বিট লবণ ২৫০ গ্রাম।

আট- কাঠ কয়লা ২০০ গ্রাম।

নয়- মোটা বালি ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পরিমাণ।

প্রথমে ইটের গুড়া চালনি দিয়ে চেলে নিতে হবে। ইটের গুড়া ভাঙ্গার পর তার পরিমাপ হবে একটা কম কিংবা চালের সমপরিমাণ। অর্থাৎ চাল বা গমের আকারে ছোট ছোট গুড়ো করে নিতে হবে। ইটের গুড়া ব্যবহার করার আগে সেগুলো লবণ বা পটাশ পানিতে ভালো করে ধুয়ে তারপর রোদে শুকিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।

একইভাবে ঝিনুক শামুকের গুরা কাঠ-কয়লা সমুদ্রের ফেনা ডিমের খোসা গুরু করে নিয়ে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। ছোট ছোট দানা আকারে গুরো করতে হবে যাতে কবুতর সেগুলো ঠোকর দিয়ে খেতে পারে। উপাদান গুলো জীবাণুমুক্ত করা খুবই জরুরী। কেননা এসব উপাদানে সালমনেলা জীবাণু থাকে। তাই গ্রিট ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত না করে নিলে কবুতর কে গ্রিট প্রদানের সমস্ত উদ্দেশ্যেই বিফলে যাবে। জীবানুমুক্ত করার জন্য অবশ্যই ভাল ভাবে রোদে শুকাতে হবে।





গ্রিট তৈরীর যে উপাদান গুলোর কথা এখানে বলা হয়েছে সেগুলো সবগুলোই যে লাগবে বিষয়টি এমন নয় আপনি হাতের কাছে যেগুলো পাবেন সেগুলো দিয়েই গ্রিট তৈরি করে নিতে পারেন। তবে ভালো ভাবে জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।

বাজারে বিভিন্ন ধরনের গ্রিট কিনতে পাওয়া যায়। তবে গ্রিট নিজে তৈরি করে নেয়াটাই ভালো। বর্তমানে অনলাইনে কিছু ভালো মানের গ্রিট কিনতে পাওয়া যায়। সেগুলোর মান যদি ভাল থাকে আপনি সেই গ্রিট ব্যবহার করতে পারেন। গ্রিট কেনার আগে অবশ্যই গ্রিট এ থাকা উপাদানগুলো যাচাই করে নিবেন।

সতর্কতাঃ


একবার গ্রিট বানিয়ে আপনি দুই থেকে তিন মাস ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই মাসে দুইবার গ্রিট গুলো রোদে শুকিয়ে নেবেন। কারণ গ্রিট এ যে উপাদান গুলো থাকে তাতে ফাঙ্গাস পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই অবশ্যয়ই কিছু দিন পর পর গ্রিট রোদে শুকাতে হবে।

অতিরিক্ত গ্রিট দেয়ার ফলে ডিম এর খোসা শক্ত হয়ে যায়। ফলে ডিম ফাটিয়ে বাচ্চা বেরিয়ে আসতে পারে না। তাই গ্রিট প্রয়োগের পরিমান অবশ্যই পরিমান মত হতে হবে।

কবুতরকে গ্রিট প্রয়োগের পরিমাণ-

কবুতর কে সপ্তাহে ২ বার গ্রিট প্রদান করতে হবে। কবুতর এর সামনে সবসময় গ্রিট দিয়ে রাখা উচিত নয়। আবার খুব বেশি পরিমাণে গ্রিট প্রদান করা উচিত নয়। যেসব কবুতরের বাচ্চা রয়েছে সেসব কবুতরকে প্রত্যেকদিন অল্প পরিমাণে গ্রিট প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়াঅন্যান্য কবুতর কে এক মুঠ পরিমাণ গ্রিট প্রদান করতে হবে। কবুতর কে আলাদা বাটিতে গ্রিট প্রদান করতে হবে।


সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিজের খেয়াল রাখবেন। কবুতরের কবুতরের জন্য গ্রিটের প্রয়োজনীতা এবং গ্রিট তৈরীর ,বানানো  পদ্ধতি এই বিষয়ে আরো কোন কিছু জানার থাকলে বা কোন বিষয় না বুঝতে পারলে কমেন্ট করে জানাবেন। আমি যতটুকু পারি আপনাদের সাহায্য করার চেষ্টা করব। আপনারা চাইলে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ বা ফেসবুক পেইজ এ যুক্ত হতে পারেন। সেখানে পোস্ট করেও অথবা পেইজ এর ইনবস্ক এ ম্যসেজ করেও আপনারা কবুতর নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। ধন্যবাদ।

 আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হন