কবুতরের মল্টিং কি? মল্টিং কেন হয়? মল্টিং এর সময় করনীয়। কবুতরের গায়ের পশম উঠে যাওয়া,পালক ঝরে যাওয়া,লোম উঠে যায় কেন?
কবুতরের মল্টিং |
কবুতরের মল্টিং বা পালক উঠে যাওয়া কোন রোগ নয়। কবুতর এর প্রত্যেক বছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে গায়ের পশম উঠে গিয়ে আবার নতুন করে পশম গজায়। একে মল্টিং বলে। এক এক কবুতর এর এক এক সময়ে এই মল্টিং বা পশম উঠে যেতে পারে। সাধারণত কবুতর এর পাঁচ থেকে ছয় পর বয়স হলে মল্টিং শুরু হয়। শুধু মাত্র নয় কবুতর ছাড়াও যে কোন পাখির ই বছরে একবার মল্টিং হয়ে থাকে। মল্টিং হলে সব পশম বা লোম এক বারে উঠে যায় না। পর্জায় ক্রমে গায়ের পশম উঠে। সাধারনত ঘার বা গলা থেকে এই পশম উঠা শুরু হয়।
কবুতরের এই মল্টিং বা পালক ওঠা শুরু হলে একবারে সব পালক ঝরে যায় না। এক এক সময় শরীরের এক এক জায়গায় লোম উঠে যায় এবং কিছুদিন পরে নতুন করে আবার লোম গজায়। ঘাড়ে বা মাথার লোম যখন ওঠে তখন আমাদের চোখে সেটা বেশি পরে।
যারা নতুন কবুতর পালন শুরু করে তারা হয়তো অনেক সময় ভয় পায় যে তার কবুতরের সব লোম উঠে যাচ্ছে। এতে ভয় পাবার কিছু নেই। এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়।
মলটিং বা পালক ঝরে গেলে কি করনীয় বা যখন মল্টিং শুরু হবে তখন কি করতে হবে এসব বিষয়গুলো নিয়ে এখন আলোচনা করা হবে।
এখানে তিনটি করনীয় কাজ বলব যা এই সময়ে কবুতর এর সুস্থতার জন্য খুব জরুরি -
এক। কবুতর কে ভালো মানের খাবার দিতে হবে। এ সময় কবুতর এর শরীরে পুষ্টি চাহিদা ঘাটতি হয়। তাই এই সময়ে ভালো খাবার দেওয়া খুবই জরুরী। এই সময়ের খাবারের মিশ্রণে অবশ্যই প্রোটিন জাতীয় খাবারের মিশ্রন বেশি থাকতে হবে। কারন প্রটিন জাতীয় খাবার নতুন লোম গজাতে সাহায্য করে থাকে। প্রোটিন জাতীয় খাবার হল – মুগ ডাল, মসুর ডাল, ডাবলি ডাল ইত্যাদি। প্রোটিন কবুতর এর লোম গজাতে এবং শারীরিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা কবুতরকে সব সময় ভালো খাবার দিতে পারেন না তারা অন্তত পক্ষে এই সময়ে খাবার এর সাথে প্রোটিন জাতীয় খাবার দেয়ার চেষ্টা করবেন। অনেক সময় কবুতর প্রোটিন এর অভাবে অনেক দূর্বল হয়ে পরে।
দুই। পাশাপাশি এই সময়ে মাল্টিভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম দিতে পারেন। যেহেতু এই সময়ে কবুতর এর শারীরিক পরিবর্তন হচ্ছে তাই কবুতর এর শারীরিক সুস্থতার জন্য মাল্টিভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম প্রয়োগ করা যেতে পারে। আপনারা লিভ ওয়েল বা রেনা ডব্লিউ এস মাল্টিভিটামিন হিসেবে এবং ক্যালপ্লেক্স ক্যালসিয়াম হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন। (হাফ লিটার পানিতে এক মিলি পরিমাণ) ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম কবুতর কে শারিরীক ভাবে সুস্থ রাখতে অনেক সহায়তা করবে। মল্টিং ছাড়াও নিয়মিত কবুতর কে ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম দেয়া যেতে পারে। এতে কবুতর সুস্থ থাকবে। কবুতর ডিম বাচ্চা ভালো করবে।
তিন। এই সময়ে অবশ্যই কবুতর কে গোসল এর সুযোগ বা ব্যবস্থা করে দিতে হবে। গোসল কবুতর এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। এই সময়ে কবুতর এর জন্য গোসল খুবই দরকার। যারা খাঁচায় কবুতর পালন করেন তারা খাঁচায় বেশি করে পানি দিয়ে রাখবেন। পানি পেলে কবুতর নিজ থেকেই গোসল করবে। গোসল কবুতর এর গায়ের রং উজ্জ্বল করে। নিয়মিত গোসল কবুতর এর গা থেকে দুর্ঘন্ধ দূর করে। কবুতর এর গায়ে পোকা বা মাছি কম হয়। বিশেষ করে ডিম পারার পরে কবুতর এর জন্য গোসল খুবই জরুরি।
কবুতরের মলটিংয়ের সময় যেসব কাজ করা যাবে না -
মল্টিং এর সময় কবুতর কে দিয়ে ডিম বাচ্চা করানো উচিত নয়। এতে কবুতর এর শরীরে অনেক চাপ পড়ে। যেহেতু কবুতর এর শরীরে একটি শারীরিক পরিবর্তন হচ্ছে তাই কবুতর এর জন্য এই সময়ে রেস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কবুতর যদি ডিম পেড়েও থাকে, যদি সুযোগ থাকে সেটি অন্য কবুতর কে দিয়ে ফোটানোই ভালো। এই সময়ে ডিম বাচ্চা করালে কবুতর অনেক দুর্বল হয়ে পরে। যার ফলে পর্বরতিতে অনেক সময় কবুতর ডিম বাচ্চা করতে সমস্যা করতে পারে।
সতর্কতাঃ
মলটিং ছাড়াও কবুতর এর শরীরে পুষ্টির অভাব এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণেও লোম ঝরে যেতে পারে। আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে আপনার কবুতর এর কোন সমস্যাটি হচ্ছে। এই সমস্যা প্রতিরোধের জন্য কবুতর কে সবসময় পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। অনেক সময় ছোট বাচ্চার শরীর এর লোম ঠিকমতো গজায় না বা ফাঁকা ফাঁকা লোম গজায়। এই সমস্যাটি হয় পুষ্টিহীনতার কারণে। ছোটবেলা থেকে কবুতর যদি অপুষ্টিতে ভোগে তাহলে ঠিকমতো লোম গজায় না। এজন্য ভালো খাবার কবুতর এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কবুতর এর পালক ঝরে যাওয়া বা লোম উঠে যাওয়া বা মল্টিং নিয়ে কোন কিছু জানার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আমি যতটুকু পারি সাহায্য করার চেষ্টা করব। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিজ কবুতরের খেয়াল রাখবেন। আপনারা চাইলে আমাদের ফেসবুক পেইজ বা ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন। সেখানে নিয়মত কবুতর এর সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয়া হয়। ধন্যবাদ।