কবুতরের জন্য সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার তৈরি
কবুতরের জন্য সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার |
কবুতর এর ভাল স্বাস্থ্য এবং ডিম বাচ্চা করার জন্য এবং কবুতর কে রোগমুক্ত রাখতে ভালো কবুতরের জন্য সুষম এবং পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। নিচে কবুতরের জন্য একটি সুষম এবং পুষ্টিকর খাবারের তালিকা দেয়া হলো। এখানে যে খাবার গুলোর কথা বলা হয়েছে তা আমি আমার কবুতর এর জন্য ব্যবহার করে থাকি এবং এভাবে খাবার ব্যবহার করে আশা করা যায় আপনারা সকলেই ভালো ফলাফল পাবেন।
এখানে ১০ কেজি পরিমাণ খাবারের জন্য এখানে খাবারের জন্য তালিকা দেয়া হলো-
খাবার |
পরিমান |
গম |
4 কেজি |
ডাবলি |
500 গ্রাম |
মুগ ডাল |
500 গ্রাম |
এংকর ডাল |
500 গ্রাম |
মসুর ডাল |
500 গ্রাম |
সরিষা |
500 গ্রাম |
সবুজ মটর |
500 গ্রাম |
বাজরা |
1 কেজি |
পপকর্ন (আস্ত) |
250 গ্রাম |
সূর্যমুখীর বীজ |
250 গ্রাম |
ধান |
1 কেজি |
কাউন |
1 কেজি |
এবারে আলোচনা করা যাক আপনার কবুতর কে কি কি খাবার দেয়া যাবে না বা কি কি খাবার দিলে কবুতর রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে-
রেজা - রেজা সাল্মোনেলার জীবাণু বহন করে।আপনারা হয়তো বা একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন অধিক পরিমাণে রেজা কবুতর কে খাওয়ানোর ফলে কবুতর এর পায়খানা সবুজ হয় কিংবা পাতলা পায়খানা হয় অর্থাৎ কবুতর নরম পায়খানা করতে শুরু করে। রেজা খাওয়ালে কবুতরের পায়খানায় অনেক বেশি দুর্গন্ধ হয়। তাই কবুতর কে সুস্থ রাখতে রেজা খাওয়ানোর থেকে বিরত থাকুন। যদিও এই খাবার কবুতর অনেক পছন্দ করে তবুও ভালো স্বাস্থ্যের জন্য কবুতরকে রেজা খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। তবে রেজা যদি ভালো করে রোদে শুকিয়ে বা চুলোয় ভালো করে জাল দিয়ে কবুতর কে দিলে তাতে কোন সমস্যা হয় না। তবে অসুস্থ কবুতর কে রেজা না দেয়াই ভালো। এতে অসুস্থ কবুতর সেরে উঠতে সময় বেশি লাগতে পারে।
পপকর্ন ভাঙ্গা - আমি আমার সুষম খাবারের তালিকায় পপকর্নের কথা বলেছি কিন্তু সেটা আস্ত পপকন এর কথা বলা হয়েছে। কবুতর কে ভাঙ্গা পপকন না দেয়াই ভালো। কারণ ভাঙ্গা পপকর্ন ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত খুব তাড়াতাড়ি হয় তাই এই ছত্রাক আক্রান্ত খাবার কবুতর কে দিলে কবুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুন বেড়ে যায়। কিছু কবুতর আছে পপকন একদম খায় না আবার কিছু কবুতর আছে পপকন খায়। যেসব কবুতর পপকর্ন খায় সেসব কবুতরকে অবশ্যই পপকর্ন দেয়ার আগে ভালো করে শুকিয়ে কিংবা চুলায় জ্বাল দিয়ে, পরিষ্কার করে কবুতর কে খেতে দিতে হবে। সাথে সাথে অত্যন্ত সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে যাতে পপকন কখনোই ছত্রাক আক্রান্ত না হয়।পপকর্ন এর গায়ে এক ধরনের সাদা সাদা আবরণ দেখা যায় এই আবরণী হলো ছত্রাক। পপকর্ন একবার রোদে শুকানোর পনের থেকে বিশ দিন পরে বের করে আবার শুকাতে হবে, কারন বেশি দিন আবদ্ধ অবস্থায় থাকলে তাতে ছত্রাক পরতে পারে। গরমের দিনে এই কাজটি না করলেও শীত কিংবা বর্ষার দিনে এই কাজ টি অবশ্যই করতে হবে। কেননা বর্ষার দিনে তাড়াতাড়ি পপকর্ন এ ছত্রাক বেশি পরে।
চিনা - চিনা এক ধরন এর ছোট ছোট দানাদার চাল। এই চাল কবুতরকে খেতে দেয়া হয়। চিনা তে প্রচুর পরিমাণে ময়লা ধুলাবালি থাকে এই ধুলাবালির যুক্ত খাবার কবুতর খেলে কবুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিনা আকারে ছোট হওয়ায় এটি থেকে সম্পূর্ণ ধুলা একদম মুক্ত করা সবসময় সম্ভব হয় না। তাই সুষম খাবার এর তালিকায় চিনা না রাখাই ভাল। চিনা খেতে দিলে অবশ্যই খুব ভাল করে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
কবুতর বাচ্চা দিলে তখন কি খাবার দেয়া উচিত?
কবুতর কে সারাবছরই প্রোটিন শর্করা এবং তেল জাতীয় খাবার এর মিশ্রণে তৈরি সুষম খাবার দেয়া উচিত। তবে যখন কবুতর এর বাচ্চা ফুটবে তখন খাবারে ছোট দানাদার খাবার এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। যেমন, জিরা গম, মসুর ডাল, কাউন ইত্যাদি। কবুতর এর বাবা-মা যদি অধিক পরিমাণে বড় দানাদার খাবার খেয়ে ফেলে এবং সে খাবার যদি ছোট বাচ্চাকে খাওয়ায় তাহলে অনেক সময় তা ঠিকমতো হজম হয় না তাই এই সময়ে ছোট দানাদার খাবার এর পরিমাণ কবুতর এর খাদ্য তালিকাতে বাড়িয়ে দিতে হবে।
পাশাপাশি আপনি চাইলে মাল্টিভিটামিন এবং অল্প পরিমাণ ক্যালসিয়াম ব্যবহার করতে পারেন। মাল্টিভিটামিন হিসেবে রেনা ডব্লিউ এস (পশু পাখির ওষুধ এর দোকানে পাবেন) লিভওয়েল (মানুষের ওষুধ এর দোকানে পাবেন) এবং ক্যালসিয়াম হিসেবে ক্যালপ্লেক্স বা (পশু পাখির ওষুধ এর দোকানে পাবেন) ক্যালবো ডি (মানুষের ওষুধ এর দোকানে পাবেন) ব্যবহার করতে পারেন।
কবুতর যদি বাচ্চা না খাওয়ায় আপনি হ্যান্ড ফিড করানোর জন্য উপরের সুষম খাবার এর তালিকা থেকে ছোট বা মাঝারি সাইজের খাবার গুলো নিয়ে এক রাত ভিজিয়ে রেখে খাওয়াতে পারেন। বাচ্চা কবুতর কে অনেকে রাইচ স্যালাইন খায়িয়ে বড় করতে চায়। এটা মোটেই ঠিক নয়। কারন রাইচ স্যালাইন খাওয়ালে বাচ্চা কবুতর এর গ্রথ ঠিক মত হয় না। বাচ্চা কবুতর এর সব রকম পুষ্টি শরিরে যায় না। তাই রাইচ স্যলাইন না দিয়ে আপনারা দানাদার খাবার খাওয়াবেন।
গরম এর দিনে কবুতর কে তেল জাতীয় খাবার কম দিতে হবে। উপরে উল্লিখিত সুষম খাবার এর তালিকা অনুযায়ী খাবার দিলেই হবে। তবে শীতের সময়ে তেল জাতীয় খাবার এর পরিমাণ একটু বাড়িয়ে দিলে কবুতর এর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। অনেকেই গরমের দিনে খাদ্য তালিকা থেকে সম্পূর্ণ তেল জাতীয় খাবার বাদ দিয়ে দেয়। সারাবছর অল্প পরিমাণে তেল জাতীয় খাবার কবুতর কে দিলে এতে তেমন কোনো ক্ষতির কারণ নেই।
সুষম খাবারের পাশাপাশি কবুতর কে অবশ্যই পরিষ্কার পানি এবং নিয়মিত গ্রিট প্রদান করতে হবে। এর সাথে অবশ্যই নিয়মিত কবুতর এর ঘর বা খাঁচা পরিষ্কার করতে হবে।
কবুতর এর বাচ্চা যখন বড় হবে তখন অবশ্যই ভালো মানের খাবার দিতে হবে এবং এই সময়ে প্রোটিন জাতীয় খাবার এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। প্রোটিন জাতীয় খাবার হল, মসুর ডাল, মুগ ডাল ডাব্লি ডাল ইত্যাদি।
খাবার প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতাঃ
এক- বাজার থেকে অনেকে এক ধরনের মিক্স খাবার কিনে এনে কবুতর কে দেয়। সবথেকে ভালো হয় এই খাবার না দিয়ে প্রত্যেকটি খাবার আলাদা আলাদা কিনে নিজের মিক্স করে কবুতর কে দিলে। অবশ্যই কবুতর কে খাবার দেয়ার আগে সেটি ভালো করে ঝেড়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে তারপর কবুতর কে দিতে হবে।
দুই- অনেকে কবুতর এর খাবার পরিষ্কার করার জন্য খাবার পানি দিয়ে ধুয়ে নেয়। এটি করা মোটেই উচিত নয়। খাবার ধুলে খাবারের থাকা পুষ্টিগুণ অনেকাংশে কমে যায়।
তিন- অনেকদিন খাবার মজুদ করে রাখলে খাবারে এক ধরনের পোকা জন্মায়। তাই বেশি পরিমাণে খাবার কিনে রাখলে কিছুদিন পর পর বের করে সেটি রোদে শুকাতে হবে।
চার- খাবার এর পরিমাণ যদি কম থাকে তাহলে চুলায় জ্বাল দিয়ে গরম করে সেটি ঠান্ডা করে কবুতর এর জন্য মজুদ করে রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে খাবার চুলায় জ্বাল দিতে গিয়ে যেন পুড়ে না যায়। খাবার গরম করার পরিমাণ হবে এইরকম আপনি হাত দিয়ে ধরলে সেটি আপনার সহ্য ক্ষমতার মধ্যে থাকে।
সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিজ কবুতর এর খেয়াল রাখবেন। কবুতরের জন্য সুষম এবং পুষ্টিকর খাবার নিয়ে আরও যদি কোন কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ।