কবুতর এর মাসিক কোর্স নিয়ে সকল কথা

কবুতর এর মাসিক কোর্স

কবুতর কে রোগের হাত থেকে বাঁচাতে এবং কবুতর এর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং কবুতর থেকে ভালো ডিম এবং বাচ্চা পেতে কবুতর এর মাসিক কোর্স অনেক প্রয়োজন ।


কবুতর এর  মাসিক কোর্স
সুস্থ্য সবল কবুতর


কবুতর এর মাসিক কোর্স কি?

কবুতর কে প্রত্যেক মাসে নিয়ম করে কিছু ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো হয়। একেই কবুতর এর মাসিক কোর্স বলে।

আমরা প্রতিদিন কবুতর কে যেসব খাবার দেই সেগুলো খুব ভালো মানের হলেও তা থেকে অনেক সময় কবুতর এর সব ধরন এর ভিটামিন এবং খনিজ লবন এর চাহিদা পূরণ হয় না। তাই আমরা মূলত কবুতর কে মাসিক কোর্স করিয়ে থাকি। কবুতর থেকে যদি লাগাতার ডিম এবং বাচ্চা নেয়া হয় সেক্ষেত্রে মাসিক কোর্স করানো আরো জরুরি হয়ে পরে। শুধু যে ব্রিডিং কবুতর কেই যে মাসিক কোর্স করাতে হবে এমন টি নয়। সব বয়স এর কবুতর কেই মাসিক কোর্স করানো যেতে পারে।

তবে মাসিক কোর্স করানোর সময় অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে কোনো ওষুধই যেন খুব বেশি পরিমান এ প্রয়োগ না করা হয়। প্রত্যেক টা ওষুধ ই প্রয়োজন মত ব্যবহার করতে হবে। কারন অতিরিক্ত ওষুধ লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি করে। অতিরিক্ত ওষুধ প্রয়োগের কুফল সম্পরকে কম বেশি আমরা সকলেই জানি।

অনেকেই মনে করে কবুতর এর মাসিক কোর্স এর কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমি বলব দুই মাস আপনি মাসিক কোর্স করিয়ে দেখুন। ফলাফল আপনি নিজের চোখের সামনেই দেখতে পাবেন। আবার অনেকে মাসিক কোর্স এক মাস করিয়ে বাদ দিয়ে দেয়।। এটি ঠিক নয়। কবুতর কে প্রত্যেক মাসেই মাসিক কোর্স করাতে হবে।

তবে অসুস্থ কবুতর কে মাসিক কোর্স করানো মোটেই ঠিক নয়। কবুতর অসুস্থ হলে তাকে আলাদা করে যে রোগ হয়েছে তার চিকিৎসা করাতে হবে। তারপর কবুতর যখন সম্পূর্ন রোগ মুক্ত হবে তখন আবার মাসিক কোর্স করানো শুরু করতে হবে।

নিচে কবুতর এর মাসিক কোর্স এ কি কি ওষুধ দিতে হবে তার একটি তালিকা দেয়া হলঃ

প্রত্যেক মাসে ওষুধ গুলো চক্রাকারে ঘুরবে। অর্থাৎ এক মাস এমন ভাবে ওষুধ গুলো দেয়ার পরে আবার পরের মাসে ও ঠিক এমন ভাবেই প্রত্যক টি ওষুধ প্রয়োগ করে যেতে হবে।

  

কোর্স এর নাম

ওষুধের নাম

পরিমান

তারিখ

ক্রিমির

কোর্স

এভিনেক্স/

এচিমেক

লিটার পানিতে হাফ মিলি  পরিমান

(ক্রিমির কোর্স করানোর আগে অবশ্যই লিভার টনিক দিতে হবে)

মাসের - তারিখ ( মাস পর পর)

নিয়ম অনুযায়ী ক্রিমির কোর্স করাতে হবে

 

সাল্মোনেলা কোর্স

হেমিকো পিএইচ/ সাফি/লেবু+চিনি

+লবন

হাফ লিটার পানি তে মিলি  পরিমান

-১০ তারিখ

ডি ৩ই ভিটামিন

ইএস- ডি / ওমেগা ডি / স্পিড ডি

হাফ লিটার পানি তে মিলি  পরিমান

১১-১৩ তারিখ

ভিটামিন

 

সেল / রেনা সেল / সেল প্লাজা

হাফ লিটার পানি তে মিলি পরিমান

১৪-১৬  তারিখ

ক্যালসিয়াম

ক্যালপ্লেক্স/ ক্যালবো ডি/ ক্যালফাস্ট

হাফ লিটার পানি তে মিলি  পরিমান

১৭-১৯  তারিখ

বি কমপ্লেক্স

+ থায়ামিন

বি কম ভেট+ থায়ামিন

হাফ লিটার পানি তে মিলি  পরিমান

২০-২২  তারিখ

মাল্টিভিটামিন

রেনা ws/ লিভ ওয়েল

হাফ লিটার পানি তে মিলি পরিমান  

২৩-২৫  তারিখ

লিভার টনিক

লিভা ভেট/ লিভা টন / কারমিনা

হাফ লিটার পানি তে মিলি  পরিমান

২৬-২৮  তারিখ

 
























এবারে যে ওষুধ গুলোর নাম এখানে বলা হলো এই ওষুধ গুলো আপনি কেন দিবেন এবং কোন ওষুধ কি কি কাজ করবে এসব নিয়ে আলোচনা করা হল। প্রত্যক টি ওষুধ এর উপকারিতা সম্পর্কে এখন বলা হল।


কৃমির কোর্স -
কবুতর এর ভাল স্বাস্থ্য এবং ডিম বাচ্চা পেতে কৃমির কোর্স এর উপকারিতা অপরিসীম। এমন অনেকেই আছে যারা মাসিক কোর্স না করালেও অন্তত ক্রিমির কোর্স অবশ্যয়ই করায়। কারন কবুত এর এমন অনেক ছোট ছোট সমস্যা আছে যা ক্রিমির কোর্স না করানোর জন্য হয়ে থাকে। যেমন- অতিরিক্ত ক্রিমি হলে কবুতর অনেক সময় বমি করে, আবার অনেক সময় পাতলা পায়খানা করে। কিছু কিছু সময় কবুতর এর ডিম বাচ্চার ক্ষেত্রেও অনেক সময় সমস্যা হয়। ডিম জমে না বা ডিমের ভিতরে বাচ্চা মারা যায়। কবুতর এর এমন সমস্যা যাতে না হয় সেজন্য অবশ্যই দুই মাস পর পর ক্রিমির কোর্স করাতে হবে। আপনারা কবুতরের ক্রিমির কোর্স করানোর সঠিক নিয়ম এখান থেকে জানতে পারেন।

সালমোনেলা কোর্স - কবুতরের সালমোনেলা, সবুজ পায়খানা, পাতলা পায়খানা, হলুদ পায়খানা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। অনেক সময় আবহাওয়া পরিবর্তন এর কারন এ কবুতর পাতলা পায়খানা বা সবুজ পায়খানা করে থাকে। সালমোনেলা কোর্স কবুতর এর এসব সমস্যা সমাধান এ সহায়তা করে।



 

ভিটামিন এ ডি ই - কবুতর এর শরীরে এ ডি এবং ই ভিটামিন এর অভাব পূরণ করে। যা কবুতর এর ভালো ডিম বাচ্চা করতে খুবই প্রয়োজন।

ভিটামিন ই – কবুতর এর ডিম জমা এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন। অনেক সময় ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা যায়, ডিম ফুটে বাচ্চা ঠিক মত বেরিয়ে আসতে পারে না। কবুতর এর এমন সমস্যা সমাধান এ ভিটামিন ই গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ক্যালসিয়াম - ক্যালসিয়াম এর অভাবে ডিমের খোসা নরম হয়। কবুতরের শারীরিক বৃদ্ধি ঠিকমতো হয়না। কবুতর যদি ছোট আকারের ডিম পারে বা সাধারন কবুতর যেমন ডিম পারে তার থেকে ব্যতিক্রম আকারের ডিম পারে তাহলে কবুতরকে ক্যালসিয়াম দিতে হবে। আবার অনেক সময় কবুতর বাঁকা কিংবা চিকন আকারের ডিম পারে এমন ডিম থেকেও বাচ্চা ফুটে বের হয় না। তাই এমন ডিম সংক্রান্ত সমস্যা হলে কবুতর কে ক্যালসিয়াম দিতে হবে।


কবুতর এর ক্যালসিয়াম
কবুতর এর ক্যালসিয়াম



বি কমপ্লেক্স এবং থায়ামিন – কবুতর এর টাল রোগ প্রতিরোধে বি কমপ্লেক্স এবং থায়ামিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পাশাপাশি ভিটামিন বি এর অভাব পূরণ করে।

মাল্টিভিটামিন - এছাড়াও কবুতর এর শরীর এ আরও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ লবণ এর প্রয়োজন হয় এসব ভিটামিন এবং খনিজ লবণের অভাব পূরণ করে মাল্টিভিটামিন।

লিভার টনিক - বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক এবং ওষুধ ব্যবহারের ফলে কবুতর এর লিভারে অনেক চাপ পড়ে তাই কবুতর এর লিভার ভালো রাখতে লিভার টনিক প্রয়োজন। বিশেষ করে যখন কবুতর কে ক্রিমির কোর্স যখন করানো হয় তখন এটি খুব প্রয়োজন।

সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিজ কবুতর এর খেয়াল রাখবেন। কবুতর এর মাসিক কোর্স নিয়ে আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন।

ধন্যবাদ।