কবুতরের গায়ে উকুন পোকা মাছি দূর করার উপায়
কবুতরের পালকে উকুন |
আমরা যারা কবুতর পালি তারা অনেকেই এই সমস্যার সম্মুখীন প্রায়ই হয়ে থাকে, কবুতর এর গায়ে উকুন ও মাছি হলে সে ক্ষেত্রে আমাদের কি করনীয় অর্থাৎ কি করলে এই পোকা গুলো দূর করা যাবে সেসব বিষয় নিয়ে আজকে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি কি কি কাজ করলে আপনার কবুতরের গায়ে উকুন পোকা বা মাছি আর হবেনা সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
প্রথমেই আলোচনা করা যাক কবুতরের গায়ে যদি উকুন বা পোকা হয় তাহলে কবুতরের শরীরে এর কি প্রভাব পড়তে পারে অর্থাৎ অপকারিতা নিয়ে-
- কবুতর এর গায়ে পোকা হলে কবুতর খুব অস্বস্তিতে ভোগে। তার চঞ্চলতা বেড়ে যায়।
- কবুতরের গায়ে অধিক পরিমাণ চুলকানি হয়। সে প্রচুর গা চুলকায়।
- অনেক সময় অতিরিক্ত চুলকানির কারণে কবুতর ডিমে বসা থাকলে ডিম থেকে অনেক সময়ে উঠে যেতে পারে। এটি হয়ে থাকে কবুতর এর গায়ে অধিক পরিমাণে চুলকানি এবং অস্বস্তির কারণে।
- কবুতর এর গায়ে উকুন পোকা বা মাছি হলে কবুতর অনেক সময় খেতে চায় না ।
- অধিক পরিমাণে উকুন হওয়ার ফলে কবুতর অনেক সময় অসুস্থ হয়েও যেতে পারে।
- আবার অনেক সময় কবুতর দিন দিন শুকিয়ে যেতে দেখা যায়। কবুতর এর বুকের হাড় বের হয়ে যায়।
এই ধরনের উকুন পোকা বা মাছি গুলো কবুতরের শরীর এর রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। যেমন আমাদের মানুষের মাথায় কখনো উকুন হলে সেই উকুন গুলো যেমন অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করে এবং সেই উকুন গুলো কিন্তু আমাদের মাথার রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। ঠিক তেমনি কবুতর এর গায়ে উকুন গুলো কবুতর এর গায়ের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। যার কারণে কবুতর অসুস্থ হয়ে যেতে পারে এবং শুকিয়ে ও যেতে পারে। এছাড়াও আপনি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
এবারে জেনে নেয়া যাক আপনার কবুতর এর যদি উকুন বা পোকা হয়ে থাকে তাহলে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে সেগুলো দূর করা সম্ভব-
এখানে চারটি ওষুধের নাম বলা হচ্ছে আপনারা যে কোন একটি ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। নিচে কোন ওষুধ টা কিভাবে ব্যবহার করবেন তার নিয়ম দেয়া হল-
১। ইলেক্টনিল ভেট (electonil vet)
২। ইভারমেক ভেট (ivermec vet) prize-46 tk
৩।এ মেকটিন ভেট (a mectin vet)
৪। Temsen( USS) Powder
ইলেক্টনিল ভেট- ওষুধটি 1 লিটার পানিতে 1 গ্রাম পরিমাণ মিশিয়ে ভালো করে নাড়াতে হবে। তারপর সেই পানিতে আপনার পোকা বা উকুন আক্রান্ত কবুতর টি ধরে ভালো করে গোসল করিয়ে দিতে হবে। এই সময়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে গোসলের পানি যেন কবুতর এর চোখে মুখে না লাগে। অর্থাৎ আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে কবুতর যেন কোনো ভাবেই ওষুধ মিশ্রিত পানি না খেয়ে ফেলে। এই ওষুধটি অত্যন্ত কার্যকরী এবং এটি ব্যাবহার করে আমি নিজে অনেক ভাল ফলাফল পেয়েছি।
ইভারমেক ভেট- এবং এ মেকটিন ভেট- এই ঔষধ দুটি ড্রপ আকারে পাওয়া যায়। এই ওষুধ দুটি ব্যবহারের নিয়ম হলো, আক্রান্ত কবুতরটিকে ধরে কবুতর এর ঘাড়ে এবং বুকের চামড়ায় এক ফোঁটা করে দিয়ে দিতে হবে। আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ওষুধটি যেন চামড়ায় দেয়া হয়। কবুতর এর গায়ের লোম সরিয়ে ফাঁকা করে চামড়া বের করে এক ফোঁটা ওষুধ সেখানে দিয়ে দিতে হবে। ওষুধটি যদি কবুতর এর লোমে দেয়া হয় তাহলে কোনো ফলাফল পাওয়া যাবে না। অবশ্যই ঔষধটি কবুতর এর চামড়ায় ব্যবহার করতে হবে।
একবার ব্যবহার করার পর যদি সম্পূর্ণ গায়ের উকুন দূর না হয় তাহলে একদিন পরে আবার এক ফোটা ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। আপনাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ওষুধটি যেন কবুতর এর চোখে মুখে না লাগে। ঔষধটি ব্যবহারের এক বা দুই দিন পরে কবুতর কে গোসল করিয়ে দেবেন। এই সময়ে গোসলের পানির সাথে পটাশ বা স্যাভলন ব্যবহার করতে পারেন।
Temsen( USS) Powder- হাফ গ্রাম পাউডার 1 লিটার পানির সাথে মিশিয়ে কবুতর কে হাতে ধরে স্প্রে করে গোসল করিয়ে দিবেন মাথায় হাত দিয়ে পানি দিয়ে দিবেন।
Temsen Powder |
এখন আলোচনা করা যাক কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আপনার কবুতরের গায়ে উকুন পোকা মাছি আর হবে না-
- নিয়মিত আপনার কবুতর কে অবশ্যই গোসল দিতে হবে। অনেকেই মনে করেন কবুতর কে গোসল দেয়া যাবেনা বা কবুতরকে গোসল দেয়া উচিত নয়। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা কবুতরের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত গোসল অত্যন্ত প্রয়োজন। আবার অনেকে ডিম পারার পরে কবুতর কে গোসল দেয় না। ডিমে পানির ফোটা লাগলে ডিম নষ্ট হয়ে যাবে এটি সম্পূর্ন ভুল ধারনা।
- গোসলের সময় পটাশ বা স্যাভলন ব্যবহার করতে পারেন এতে করে কবুতর এর গায়ে পরজীবী আক্রমণের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে।
- সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো কবুতর এর ঘরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার মাধ্যমে আপনি আপনার কবুতর কে পরজীবীর হাত থেকে বাঁচাতে পারেন।
- বাজার থেকে নতুন কোন কবুতর কিনে আনলে অবশ্যই কবুতর পোকা বা মাছিতে আক্রান্ত কিনা সেটি পর্যবেক্ষণ করে খামারে ঢুকাতে হবে। যেহেতু এই উকুন গুলো একটা কবুতর থেকে অন্য কবুতর এর সংক্রমিত হয় তাই আক্রান্ত কবুতর কে যদি ভাল কবুতর এর কাছ থেকে আলাদা করে নিয়ে চিকিৎসা করা, না হয় তাহলে অন্যান্য কবুতর পোকা বা মাছিতে আক্রান্ত হবে। কারন কবুতর এর উকুন বা পোকা খুব ধ্রুতই এক কবুতর থেকে অন্য কবুতরে ছড়ায়।
ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতাঃ
- এক মাস বয়সের আগে কবুতর কে উকুন বা পোকা মারার কোন ধরনের ওষুধ ব্যবহার না করাই ভালো। এতে করে আপনার বাচ্চা কবুতর এর ক্ষতি হতে পারে। তাই আপনার কবুতর এর যখন এক মাস বয়স হবে তখনই পোকা বা মাছি দূর করার ওষুধ গুলো ব্যবহার করবেন। কারন বাচ্চা কবুতর এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাই একদম বাচ্চা কবুতর কে এই ওষুধ গুলো দেয়া ঠিক নয়।
- যখন কোন কবুতর এর পোকা বা মাছির চিকিৎসা করা হবে তখন সেই কবুতর টি কে অন্য ভালো কবুতর থেকে আলাদা করে নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। কারণ যখন গায়ে ওষুধ প্রয়োগ করা হয় তখন মাছি বা পোকা গুলো বেরিয়ে যেতে থাকে। তখন যদি মাছিগুলো অন্য কোন কবুতর পায় তখন সেই কবুতর গুলো আবার মাছি বা পোকায় আক্রান্ত হতে পারে। তাই আক্রান্ত কবুতর কে অবশ্যই আলাদা করে নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।
- ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে কবুতর ওষুধ গুলো খেয়ে না ফেলে বা কবুতর এর মুখে বা চোখে না লেগে যায়। এমনটি হলে কবুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিজ কবুতর এর খেয়াল রাখবেন। কবুতরের গায়ে উকুন পোকা মাছি দূর করার উপায় নিয়ে আরো কোনো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এছাড়াও আমাকে ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন। ধন্যবাদ।