কবুতরের রেস্ট কি? কখন কবুতরকে রেস্ট দিতে হয়? কি কি সমস্যা হলে রেস্ট দিবেন?

কবুতরের রেস্ট কিকখন কবুতরকে রেস্ট দিতে হয়কি কি সমস্যা হলে রেস্ট দিবেন?

কবুতরের রেস্ট কি। কখন কবুতরকে রেস্ট দিতে হয়
নান কবুতর


কবুতরকে রেস্ট দেয়ার অনেকগুলো কারণ এখানে বলা হবে। এর মধ্যে যেকোনো একটি সমস্যা যদি আপনি আপনার কবুতর এর মাঝে দেখতে পান তবে আপনার কবুতর কে তখন রেস্ট  নিতে হবে।

রেস্ট কি?

ব্রীডিং কবুতর কে আলাদা রেখে বা (একসাথে রেখেও রেস্ট দেয়া যায় এটা নিয়ে সামনে বিস্তারিত আলোচনা করা হবেডিম বাচ্চা করা থেকে অথবা ডিম পারা থেকে বিরত রাখা  কে  রেস্ট বলে।  কবুতর কে সমস্যা বুঝে সাত দিন থেকে দুই মাস পর্যন্ত রেস্ট  দেয়া যেতে পারা যায়।

এবারে বলছি কি কি সমস্যা হলে আপনি আপনার কবুতরকে রেস্ট দিবেনঃ

১। হঠাৎ করেই যদি আপনার কবুতর একটি ডিম পাড়া শুরু করে তখন আপনার কবুতর কে রেস্ট দিতে হবে। অর্থাৎ আগে একটি কবুতর দুটি ডিম পারত কিন্তু এখন আপনার কবুতর টি একটি করে ডিম পাড়ে। যদি এমন সমস্যা আপনার কবুতরের সাথে হলে কবুতরকে তখন রেস্ট  দিতে হবে।

২। আপনার কবুতর টি যদি কোন কারন ছাড়া  হঠাৎ করে ডিম পাড়া অনেক দিন বন্ধ করে দেয় তাহলে কবুতর কে রেস্ট  দিতে হবে। পনের থেকে বিশ দিনের জন্য এই সমস্যার জন্য রেস্ট দেয়া যেতে পারে।

৩। আগে আপনার কবুতর এর ডিম জমত কিন্তু এখন জমে না এমন সমস্যা হলে কবুতর কে রেস্ট দিতে পারেন অথবা কবুতর এর ডিম যদি না জমে তাহলে কবুতর কে রেস্ট  দিতে হবে। 

৪। কবুতর এর ডিম এর খোসা যদি পাতলা হয় বা নরম হয় তাহলে কবুতর কে রেস্ট দিতে হবে। অনেক সময় ডিমের খোসা পাতলা হবার কারণে সহজে ডিম ভেঙে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই এমন সমস্যা হলে কবুতর কে রেস্ট দিয়ে ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম এর কোর্স করাতে হবে।

৫। কবুতর যদি ছোট আকারের ডিম পারে বা সাধারন কবুতর যেমন ডিম পারে তার থেকে ব্যতিক্রম আকারের ডিম পারে তাহলে কবুতরকে রেস্ট দিতে হবে। ছোট আকারের ডিম গুলো উর্বর হয় না। এই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় না। আবার অনেক সময় কবুতর বাঁকা কিংবা চিকন আকারের ডিম পারে এমন ডিম থেকেও বাচ্চা ফুটে বের হয় না। তাই এমন ডিম সংক্রান্ত সমস্যা হলে কবুতর রেস্টে দিতে হবে।

৬। কবুতরএর একটি ডিম জমে এবং একটি ডিম জমে না এমন সমস্যা হলে আপনার কবুতরকে তখন   অবশ্যই রেস্ট  দিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্ট করাতে হবে বা ভিটামিন ক্যলসিয়াম এর কোর্স করাতে হবে। কবুতরের ডিমে ব্লাড না জমার কারন নিয়ে পরবর্তি ব্লগ পোস্ট করা হবে।

৭। ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা গেলে, যদি ডিম থেকে বাচ্চা টি ঠিক মত বেরিয়ে আসতে না পারে বা সময়মত কবুতরের ডিম ফুটে পূর্ণাঙ্গরূপে বাচ্চাটি যদি বেড়িয়ে না আসে তখন কবুতরকে রেস্ট  দিতে হবে।

কবুতরের রেস্ট কি। কখন কবুতরকে রেস্ট দিতে হয়
সুয়া চন্দন কবুতর


কিভাবে কবুতরকে রেস্ট দিবেন?

আপনারা যারা কবুতর খাচায় পালন তারা নর মাদী কবুতর দুটি করে আলাদা আলাদা খাঁচায় রেখে রেস্টদিতে পারেন।এছাড়াও কবুতর ডিম পাড়ার পড়ে সেই ডিম সরিয়ে নিয়ে সেখানে প্লাস্টিকের ডিম দিয়ে কবুতর বসিয়ে রেখে  রেস্ট দেয়া যায়। এভাবে কবুতর আলাদা না করে একসাথে রেখে আপনারা রেস্ট দিতে পারেন। তবে ডিমে বসিয়ে রেখে রেস্ট না দেয়াই ভাল। কবুতর আলাদা খাঁচাতে রেখে রেস্ট দেয়া ভাল।

যারা ছেড়ে কবুতর পালেন তাদের জন্য কবুতর কে রেস্ট  দেয়া  টা একটু কঠিন হয়ে পরে।এক্ষেত্রে যে কবুতর দুটি কে আপনি রেস্ট  দিতে চাচ্ছেন সেই কবুতর গুলো কে দুটি আলাদা আলাদা খাঁচায় রেখে রেস্ট দিতে হবে।

 কখন আপনি কবুতরকে রেস্ট দিবেন?

উপরে যে সব কারণ বলা হয়েছে এসব কারণ ছাড়াও কবুতর এর ভালো স্বাস্থ্য এবং কবুতর থেকে ভালো ডিম বাচ্চা পেতে কবুতর কে রেস্ট দিতে হবে।এক থেকে দুই বার বাচ্চা নেয়ার পর এক জোড়া কবুতর কে অবশ্যই দশ থেকে পনের দিনের জন্য  রেস্ট  দিতে হবে। এই সময়ে আপনি চাইলে কবুতর এর মাসিক কোর্স করিয়ে নিতে পারেন।সবথেকে ভালো হয় প্রত্যেক বার কবুতর থেকে বাচ্চা নেয়ার পরে কবুতর কে রেস্ট দিতে পারলে।এতে কবুতর এর ফিটনেস ভালো থাকবে। এমন অনেক কবুতর পালক বা কবুতর ব্রিডার আছে যারা ভালো মানের বাচ্চা নেয়ার জন্য বছরে মাত্র দুই বার কবুতর দিয়ে ব্রিডিং বা ডিম বাচ্চা করায়। বছর এর বাকি সময় টা কবুতর রেস্টে  রাখে। আপনার পক্ষে এমন টি করা সম্ভব না হলে অন্তত দুই থেকে তিন বার ডিম বাচ্চা নেয়ার পরে আপনার উচিত অবশ্যই উচিত কবুতর কে রেস্ট দেয়া।




 রেস্ট এর সময়ে কি কি করবেন?

আপনি আপনার কবুতর এর যে সমস্যার কারণে রেস্ট দিচ্ছেন তা সমাধান এর ব্যবস্থা করতে হবে এই সময়ে। বেশিরভাগ সময়ই কবুতর এর ডিম এবং বাচ্চার সমস্যার কারণের জন্যই রেস্ট দেয়া হয় তাই এই সমস্যার জন্য কবুতর কে কিছু ওষুধ প্রয়োগ এর ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলো হল -

প্রথমত- কবুতর কে ভালো মানের খাবার দিতে হবে। কবুতরকে শর্করা প্রোটিন এবং তেল জাতীয় খাবার এর মিশ্রণে একটি সুষম খাবার দিতে হবে।  কবুতর এর খাবার এর তালিকা অনুযায়ী খাবার দিতে পারলে খুবই ভাল হয়।

দ্বিতীয়ত-  কবুতর কে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন গ্রিট দিতে হবে এবং এর সাথে অল্প পরিমাণ লবণ। কবুতর এর ভাল ফিটনেস এবং কবুতর থেকে ভালো ডিম বাচ্চা পেতে লবন খুবই গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কবুতর এর জন্য লবন ব্যবহার এর ক্ষেত্রে সামুদ্রিক মোটা লবন ব্যবহার করতে পারলে ভালো হয়। এই লবন থেকে কবুতর এর আয়োডিন চাহিদা পূরন হবে। যা কবুতর এর জন্য খুব ভালো ফলাফল দিবে।

তৃতীয়ত- কবুতর কে নিয়মিত গোসল এর ব্যবস্থা করতে হবে। কবুতরের গোসলের উপকারিতা বলে শেষ করে যাবে না। খাচায় কবুতর পালন কুরুন কিংবা ছেড়ে, কবুতর এর জন্য সবসময় গোসল খুব দরকার। এতে কবুতর এর গায়ের লোম উজ্জ্বল হয়। গায়ে পোকা মাকড় বা উকুন কম হয়। কবুতর এর গা থেকে দুর্গন্দ দূর করে গোসল। গোসল সব থেকে বেশি দরকার হয় কবুতর ডিম পারার পরে। কারন গোসল করার পরে কবুতর ডিমে গিয়ে বসলে ডিম এর আদ্রতা বজায় থাকে। এতে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে আসতে সহায়তা হয়।

অনেকেই মনে করে পানির ফোটা ডিমে লাগলে ডিম নষ্ট হয়ে যায়। এটি একটি সম্পুর্ন ভুল ধারনা। বরং গরমে এর দিনে গোসলের অভাবে ডিমের আদ্রতা বজায় না থাকার কারনে অনেক কবুতর এর ডিম নষ্ট হয়ে যায়। যার কারন ডিম নষ্ট হয়ে যায়।

চতুর্থতনিয়মিত কবুতর কে মাসিক কোর্স করাতে হবে। আপনাকে অবশ্যই ভিটামিন  ডি কে  কে বি এবং  ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি পূরণ করতে হবে। মূলত এসব ভিটামিন এর অভাবে কবুতর এর ডিমের ভিতর বাচ্চা মারা যায় বা ডিম ঠিক মতো জমে না। কবুতর এর মাসিক কোর্স নিয়ে জানতে এই ব্লগ টি পড়ুন।

সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিজ কবুতরের খেয়াল রাখবেন। কবুতরের রেস্ট নিয়ে আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন।

ধন্যবাদ।

আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হন