কবুতরের গোসলের উপকারিতা যা হয়ত আপনার অজানা। কবুতর এর জন্য গোসল।
যারা কবুতর পালন করে থাকে তারা হয়ত অনেকেই কবুতরের গোসলের উপকারিতা সম্পর্কে জানেনা। গোসল কবুতর এর স্বাস্থ্য ভালো রাখা ভাল ডিম বাচ্চা উৎপাদন এবং সাথে সাথে কবুতর এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই কবুতর এর সুস্থ্যতার জন্য কবুতর কে নিয়মিত গোসল দেয়া খুব ই জরুরি।
কবুতর কে গোসল না দিলে যেসব সমস্যা হতে পারে বা কবুতর এর জন্য গোসল এর উপকারিতা-
একঃ নিয়মিত গোসল এর ফলে কবুতর এর গায়ের রং সুন্দর হয়। কবুতর এর গায়ের পালক এর উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়ে। নিয়মিত গোসল এর অভাবে আপনার সুন্দর কবুতর টি দেখতে হয়তো অসুন্দর হয়ে যেতে পারে। আবার দীর্ঘদিন গোসল এর অভাবে কবুতর এর গা থেকে অনেক সময় দুর্ঘন্ধ আসে। তাই কবুতর কে নিয়মিত গোসল দেয়া খুব ই জরুরি।
দুইঃ নিয়মিত গোসল এর ফলে কবুতর এর শরীরে রোগ জীবাণু কম হয়। কবুতর রোগাক্রান্ত কম হয়। কবুতর এর মেজাজ ফুর ফুরে থাকে। কবুতর এর থেকে ভাল ডিম বাচ্চা পাবার জন্য কবুতর এর মানসিক অবস্থার প্রতি গুরুত্ত দেয়া উচিত।
তিনঃ যেসব কবুতর ডিমে তা দেয় সেসব কবুতর এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত আপনার কবুতর কে অবশ্যই গোসল দিতে হবে। অনেকেই মনে করেন কবুতর কে গোসল দেয়া যাবেনা বা কবুতরকে গোসল দেয়া উচিত নয়। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা কবুতরের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত গোসল অত্যন্ত প্রয়োজন। আবার অনেকে ডিম পারার পরে কবুতর কে গোসল দেয় না। ডিমে পানির ফোটা লাগলে ডিম নষ্ট হয়ে যাবে এটি সম্পূর্ন ভুল ধারনা। কেননা কবুতর গোসল করে ডিমে বসলে কবুতর এর ডিম এর আদ্রতা বজায় থাকে এবং ডিম ফুটে বাচ্চা টি খুব সুন্দর ভাবে বেরিয়ে আসে। অনেকেই ডিম ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দেয় ডিমের আদ্রতা বজায় থাকার জন্য। কবুতর কে নিয়মিত গোসল দিলে এটি করার কোন প্রয়োজন নেই। কেননা কবুতর গোসল করে ডিমে গিয়ে বসবে এবং প্রয়োজনীয় আদ্রতা পাবে।
চারঃ নিয়মিত গোসল দিলে কবুতরের গায়ে মাছি পোকা উকুন কম হয়। কবুতরের গায়ে খুব বেশি পরিমাণে পোকা হয়ে গেলে কবুতর তার অস্বস্তির কারণে ডিম থেকে উঠে যেতে পারে। তাই নিয়মিত গোসল কবুতরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পাচঃ গরম এর দিনে কবুতর এর গায়ের তাপমাত্রা বজায় রাখতে গোসল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতিরিক্ত গরম কবুতরের হিট স্ট্রোকের কারণ হতে পারে তাই নিয়মিত গোসল কবুতরের হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে আনে। অনেক এই বলে থাকে গরমে আমার কবুতর হাপাচ্ছে। আবার অনেক সময় কবুতর আকাশে উড়তে উড়তে হুট করে পরে গিয়ে মারা যায়। কবুতর এর এমন সমস্যা হয় অতিরিক্ত গরম এর জন্য। যদি আপনি ঠিক মত গোসল দেন এবং স্যালাইন খাওয়ান তা হলে কবুতর আর এমন সমস্যায় আক্রান্ত হবে না।
ছয়ঃ অনেকে শীতে কবুতর কে গোসল দেয় না। এটি একটি ভুল ধারনা। শীতের দিনেও কবুতর এর জন্য গোসল গুরুত্বপূর্ণ। আপনি পানি দিয়ে রাখুন কবুতর এর যদি দরকার হয় সে নিজে থেকেই গোসল করে নেবে। কবুতর কে গোসল এর জন্য জোর করার কোন প্রয়োজন নেই।যদি সম্ভব হয় গোসল এর পরে শীতের দিনে কবুতর কে কিছু সময় এর জন্য রোদে রাখবেন।
সাতঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কবুতরের গোসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গোসল এর অভাবে কবুতর অসুস্থ থাকে এবং বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
কতদিন পর পর কবুতরকে গোসল দিবেন?
যারা কবুতর ছেড়ে পালে তারা বড় একটি বাটি কিংবা গামলায় পানি দিয়ে রাখবেন। কবুতর এর যখন দরকার হবে সে নিজে থেকেই গোসল করবে। গরম এর দিনে আপনি পানি দিয়ে রাখলে দেখতে পারবেন কবুতর প্রত্যেক দিনই গোসল করে।
যারা খাঁচায় কবুতর পালন করে তারা মাঝে মাঝে কবুতর কে ছেড়ে দিয়ে গোসল করিয়ে নিতে পারেন। সেটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে খাঁচায় কবুতর বসতে পারে এমন বড় বাটিতে পানি দিয়ে রাখুন। কবুতর এর যখন দরকার হবে সে নিজে থেকেই গোসল করবে। আপনি হয়তো একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন মাঝে মাঝে কবুতর তার খাবার এর পানির বাটিতে মুখ ডুবিয়ে পানি ছিটিয়ে গোসল করার চেষ্টা করে। তখন যদি আপনি কবুতর কে পানি দেন তাহলে সে গোসল করবে।
এছাড়াও স্প্রে করেও খাঁচার কবুতর কে গোসল করানো যায়।
কবুতরকে গোসল দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতাঃ
অনেকেই গোসলের পানিতে পটাশ বা স্যাভলন ব্যবহার করে থাকে। এই পানি খেয়ে ফেললে তা কবুতর এর জন্য বিপদজনক হতে পারে। তাই কবুতর যেন এই পানি না খেয়ে ফেলে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সবথেকে ভালো হয় এসব উপাদান দিয়ে আপনি যখন কবুতর কে গোসল করাবেন তখন হাতে ধরে গোসল করিয়ে দিতে পারেন। তাহলে এই ভয় টি আর থাকবে না।
বাজার থেকে নতুন কোন কবুতর কিনে আনলে অবশ্যই কবুতর পোকা বা মাছিতে আক্রান্ত কিনা সেটি পর্যবেক্ষণ করে জীবানু নাশক ওষুধ দিয়ে গোসল করিয়ে খামারে ঢুকাতে হবে। যেহেতু এই উকুন গুলো একটা কবুতর থেকে অন্য কবুতর এর সংক্রমিত হয় তাই আক্রান্ত কবুতর কে যদি ভাল কবুতর এর কাছ থেকে আলাদা করে নিয়ে চিকিৎসা করা, না হয় তাহলে অন্যান্য কবুতর পোকা বা মাছিতে আক্রান্ত হবে। কারন কবুতর এর উকুন বা পোকা খুব ধ্রুতই এক কবুতর থেকে অন্য কবুতরে ছড়ায়। তবে আপনি যদি নিয়মিত কবুতর কে গোসল দেন এবং কবুতর এর ঘর নিয়মিত পরিষ্কার করেন তা হলে কবুতর আর পোকা বা মাছি তে আক্রান্ত হবে না।
কখনোই কবুতরকে গোসল এর ক্ষেত্রে জোর না করাই ভালো। কবুতরের গোসল এর দরকার হলে পানি দিয়ে রাখলে সে নিজে থেকেই গোসল করবে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিজ কবুতরের খেয়াল রাখবেন। কবুতরের গোসলের উপকারিতা নিয়ে আরো কোনো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এছাড়াও আমাকে ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে পারেন। ধন্যবাদ।